টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ, ঝুঁকির মুখে পর্যটন শিল্প

Passenger Voice    |    ০৩:৪৫ পিএম, ২০২৪-০২-১৪


টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ, ঝুঁকির মুখে পর্যটন শিল্প

মিয়ানমারে অব্যাহত সহিংসতার অজুহাত তুলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ আদেশ সাময়িকভাবে কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্রই ক্ষোভ প্রকাশ করেন পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ থেকে চলাচলকারী জাহাজ মালিকদের প্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, আইন সবার জন্য সমান। এখন মিয়ানমার ঘেষে ঝুঁকির কথা বলে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ঘোষণা আসার পর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। জাহাজের মালিক, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা পথে বসেছেন। এটাতো একটা গ্রুপের ষড়যন্ত্র। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে কর্ণফুলী ও বার আউলিয়া নামে দুটি জাহাজ টিকিটে দ্বিগুণ মূল্য নির্ধারণ করে পর্যটকদের হয়রানি করছে। তবে অনেকের চাপের মুখে টিকেটের দাম আগের মতো রেখেছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। এ কারণে জাহাজে ঘটছে হামলা-মারামারি।

তবে কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়ছে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও এমভি বার আউলিয়া জাহাজ। উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর ঘাট থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে জাহাজ দুটি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন চলাচল করছে। এই জাহাজগুলোর এই পথে চলাচলের ভয়েস লাইসেন্স নেই বলে জানা গেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতিতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সাময়িকভাবে জাহাজ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে ইনানী নৌ-বাহিনীর ঘাট থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনে প্রয়োজনীয় অনুমোদন সাপেক্ষে জাহাজ দুটি চলাচল করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টেকনাফ থেকেও জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

এরআগে মিয়ানমার সীমান্তে চলমান উত্তেজনার কারণে সেন্টমার্টিনে নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি সুপারিশ করেছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জাহাজ মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, সমুদ্র পথে চট্টগ্রাম থেকে আসুক কিংবা কক্সবাজার থেকে শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে ঠিকই নাফ নদীর মোহনা অতিক্রম করে সেন্টমার্টিন ঘাটে যেতে হবে। টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলো কেনো ছাড়তে পারবে না? মূলত প্রশাসন ম্যানেজ হয়ে একজন জাহাজ মালিকের দুটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করল প্রশাসন।

কক্সবাজার ইয়েজ ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ হাসান জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো ব্যবসা নেই। কক্সবাজার থেকে হাজার-দেড় হাজার পর্যটক যাওয়া আসা করছে তাতে কারও ব্যবসা নেই।

সেন্টমার্টিনের হোটেল মারমেইডের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমান বলেন, যে দুটি জাহাজ এখন চলাচল করছে সেগুলো আসতে পারলে বাকিগুলো কেনো আসতে পারছে না। এখানে বড় একটা মাফিয়া কাজ করছে। বর্তমানে আমার হোটেলে কোনো ব্যবসা নেই।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক। আমি মনে করি উনি পরিস্থিতি গভীরতা বুঝে তেমন পরামর্শ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসন টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে আরেকজন মালিকের দুটি জাহাজ চলাচল করছে। তারাতো নাফ নদী অতিক্রম করে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে সেন্টমার্টিনে যাবে। তাহলে অন্যান্য জাহাজ ও অন্য মালিকদের জাহাজ চলাচল করতে সমস্যা কোথায়? আমি মনে করি জেলার প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক।

টুয়াক সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, সীমান্ত এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। এ মুহূর্তে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল করতে পারবে। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আসার পর হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সামনে রমজান চলে আসছে। কয়েকটা দিন ব্যবসা করতে না পারলে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়বে সবাই।